মিশ্র ব্যাংক বা ব্যাংকিং কি| Mixed banking

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের আমানত ব্যাংকসমূহ সেদেশের শিল্পসমূহের প্রযে়াজন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ করতে শুরু করে এবং জার্মানিতে বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সেখানকার বিনিয়োগ ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দানে অনীহা প্রকাশ করে এবং জনগণের সঞ্চয় আমানত রাখতে শুরু করে এবং এভাবেই মিশ্র ব্যাংকের সৃষ্টি হয়।

মিশ্র ব্যাংক কাকে বলে?


অথবা, মিশ্র ব্যাংকের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, মিশ্র ব্যাংক বলতে কি বুঝ?

যে ব্যাংক ব্যবস্থায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক একই সাথে বিশেষায়িত ব্যাংকিং কার্য সম্পাদন করে তাকে শি বা বিশেষায়িত ব্যাংক বলে। অন্য ভাবে বলতে গেলে মিশ্র ব্যাংকিং এর সাথে জড়িত ব্যাংককে মিশ্র ব্যাংক বলে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: মিশ্র ব্যাংক সম্প্রতির বিভিন্ন সংজ্ঞাগুলো নিম্নরূপ:

M. N. Mishra এর মতে,
মিশ্র ব্যাংকিং বলতে এমন একটি ব্যাংক ব্যবস্থাকে বুঝায় যে সঞ্চয় সংগ্রহের সাথে ব্যাংক দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দেয়।
M.C. Vaish এর মতে,
যে ব্যাংক ব্যবস্থায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয় তাকে মিশ্র ব্যাংকিং বলে।
ড. এ. আর খানের মতে,
যে ব্যাংক ব্যবস্থায় বাণিজি্যক ব্যাংক কার্যক্রম ছাড়াও বিনিয়োগ ব্যাংক বা অন্য কোনো বিশেষায়িত ব্যাংকের কার্যক্রম একই সাথে সম্পাদন করে থাকে মিশ্র ব্যাংকিং বলে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মিশ্র ব্যাংকিং এমন একটি বিশেষ ব্যাংক ব্যবস্থা যেখানে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক একই সাথে বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে কাজ করতে পারে।

মিশ্র ব্যাংকের সুবিধা Advantages of mixed banking


মিশ্র ব্যাংক এমন এক ব্যাংক যা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কাজ করে থাকে। মিশ্র ব্যাংকের সুবিধা: মিশ্র ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি এমন ব্যাংক অন্যতম সুবিধা হলো এটি কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. অধিক তহবিল সংগ্রহ: এ ধরনের ব্যাংক ব্যবস্থায় নিজস্ব তহবিল সংগ্রহের সাথে সাথে জনগণের আমানত সংগ্রহ করে। ফলে এ ধরনের ব্যাংক অধিক তহবিল সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

৩. কর্মসংস্থান: ব্যাংক ব্যবস্থায় কার্যের পরিধি ব্যাপকতর হওয়ায় অধিক কর্মীর প্রয়োজন পড়ে। ফলে মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা অধিকতর কর্মসংস্থান করে থাকে।

৪. ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ: এখানে আমানত ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম একত্রে পরিচালিত হওয়ার ফলে স্বভাবতই ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়ে ব্যাংকের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৫. তহবিলের পর্যাপ্ত ব্যবহার: এ ধরনের ব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাপক হওয়ায় এর তহবিলের ব্যবহার সর্বাধিক হয়।

৬. বিশেষায়িত সেবা: এরূপ ব্যাংক মক্কেলদেরকে অধিক পরিমাণ এবং সেই সাথে বিশেষায়িত সেবা প্রদান করে।

৭. শিল্প উন্নয়ন: মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি বড় সুবিধা হলো এটি দেশের শিল্প উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে।।

৮. দক্ষতা বৃদ্ধি: এ ব্যবস্থায় দ্বিমুখী কার্য সম্পাদিত হয় বলে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

৯. পুঁজির উৎস: মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জনসাধারণের সঞ্চয় সংগ্রহ করা হয় বলে ব্যাংকের তহবিল স্ফীত থাকে। এ তহবিল শিল্পপতিদেরকে দীর্ঘমেয়াদের জন্য প্রদান করা হয় বলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।

১০. পরামর্শ প্রদান: মিশ্র ব্যাংকের কার্যপরিধি ব্যাপক হওয়ায় এরা তাদের মক্কেলদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে আমানতি ব্যাংকের চেয়ে বেশি সাহায্য, সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মিশ্র ব্যাংক ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে জড়িত। উপরিউক্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো আলোচনা করা হয়েছে।

মিশ্র ব্যাংকের অসুবিধা


যে ধরনের ব্যাংক বিশেষায়িত ও বাণিজ্যিক উভয় ধরনের ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে মিশ্র ব্যাংক বলে। এরূপ ব্যাংক জনগণের সঞ্চয় আমানত হিসেবে গ্রহণ করে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি ঋণদান করে। এ ব্যাংকের কতিপয় অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়।

মিশ্র ব্যাংকের অসুবিধা: মিশ্র ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অসুবিধা ও ত্রুটিগুলো পরিলক্ষিত হয়:

১. বিশেষায়ণের অভাব: মিশ্র ব্যাংকিং-এর একটি প্রধান অসুবিধা হলো এতে বিশেষায়ণের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে আমানত ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং কার্যক্রম এক সাথে পরিচালিত হওয়ায় কাজের চাপ বেশি থাকে। ফলে বিশেষ কাজে বিশেষ দক্ষতা অর্জনের সুযোগ হ্রাস পায়।

২. ঝুঁকি বৃদ্ধি: মিশ্র ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রে ঝুঁকি একটি প্রধান সমস্যা। একদিকে ব্যয় এবং অপরদিকে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খারাপ হলে ব্যাংকের ক্ষতি হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

৩. ব্যয়ের আধিক্য: এ ব্যবস্থায় অবলেখকের দায়িত্ব পালন, শেয়ার ক্রয়বিক্রয়জনিত খরচ, কোম্পানি পরিচালনার খরচ, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান ও তা আদায়জনিত খরচ ইত্যাদি বহুবিধ খরচের কারণে ব্যয়ের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়।

৪. গুটি কয়েকজনের সুবিধা: এ ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিল্পপতি ঋণ পেয়ে উপকৃত হন। ফলে দেশের অধিকাংশ ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

৫. বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি: মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞের স্বল্পতা, কার্যপরিধির ব্যাপকতা সুষ্ঠু পরিচালনা ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অভাব, খেলাপী ঋণ ইত্যাদি কারণে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

৬. দ্বিমুখী কার্য: এ ব্যবস্থায় দ্বিমুখী কার্য সম্পাদন করতে হয়। এ বাড়তি কাজের জন্য ব্যাংকগুলোর কার্যপরিচালনার ক্ষেত্রে প্রায়শ সমস্যা দেখা দেয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মিশ্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে জড়িত। উপরিউক্ত আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url