ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং|Electronic Banking
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং পদ্ধতি হলো ব্যাংকিং সেবা সুবিধা প্রদানের অত্যাধুনিক কৌশল। এটি এমন এক ধরনের ব্যাংকিং সেবা পদ্ধতি যেখানে উন্নততর ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি দ্রুত, নির্ভুল এবং ব্যাপক বিস্তৃত সেবা প্রদান সম্ভব।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বলতে কী বুঝ?
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংক কি?
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং কাকে বলে?
অথবা, ই-ব্যাংকিং কাকে বলে?
ইলেকট্রনিক ব্যাংকের সংজ্ঞা
ইলেকট্রনিক, ইলেক্ট্রমেকানিক্যাল, কম্পিউটার ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জাহির করে গ্রাহকদের প্রদত্ত সেবার মানোন্নয়নে ব্যাংক যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে তাকে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং বলে। যেমন- ডেবিট কার্ড, ডেভিট কার্ড, এটিএম কার্ড ইত্যাদি। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংয়ের কিছু সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
Allen H. Lipis (এলেন এইচ. লিপিস)-এর মতে,
ই-ব্যাংকিং এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর ও স্থানান্তরের সংখ্যা রেকর্ড সম্পন্ন করা হয়।
Fullenkamp and Others (ফুলেনক্যাম্প এবং অন্যান্য)- এর মতে,
ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতির পরিবর্তে পরিশোধ কার্য সম্পাদনকে ই-ব্যাংকিং বলে।
Richard Insley (রিচার্ড ইন্সলে) বলেন,
যে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থিতি ছাড়াই গ্রাহক ব্যাংকিং লেনদেন পরিচালনা করে, তাকে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং বলা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকদের কম্পিউটারাইজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতি দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ব্যাংকিং সেবা তথা অর্থ জমা উত্তোলন স্থানান্তর এবং এ সম্পর্কিত রেকর্ড সংরক্ষণসহ যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যসম্পাদন করা হয় তাকে ইলেকট্রিক ব্যাংকিং বলে।
ইলেকট্রনিক পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর
বর্তমানে আধুনিক ব্যাংকিংয়ের অন্যতম সংযোজন হচ্ছে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর পদ্ধতিসমূহ: ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর পদ্ধতিসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
(ক) খুচরা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবা খুচরা ইলেকট্রনিক
ব্যাংকিং হলো এমন ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে মক্কেলের স্বার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। খুচরা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এ নিম্নলিখিত কার্যক্রমগুলো সম্পাদিত হয়ে থাকে:
১. স্বয়ংক্রিয় গণনাকারী যন্ত্র: ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সেবাগুলোর মধ্যে এ.টি.এম কৌশল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হলো এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যমে দিনের যেকোনো সময় অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। তাই এ যন্ত্রের সাহায্যে একজন মক্কেল দিবা-রাত্রির ২৪ ঘন্টার যেকোনো সময় টাকা জমা বা উত্তোলন করতে পারে।
সাধারণত ব্যাংকের শাখার সম্মুখভাগে, বাণিজ্যিক এলাকায়, বিভিন্ন নামকরা বিক্রয় কেন্দ্রে এ যন্ত্র স্থাপন করা হয়, যাতে গ্রাহকগণ সহজে এর সুবিধা ভোগ করতে পারে। নির্দিষ্ট কার্ডের মাধ্যমে এ.টি.এম. যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হয়
২. ডেবিট কার্ড: ডেবিট কার্ড ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের অন্যতম একটি পদ্ধতি। ডেবিট কার্ড হলো ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমানতকারীকে প্রদত্ত চুম্বকভিত্তিক সাংকেতিক নম্বরযুক্ত বিশেষ এক ধরনের প্লাস্টিক কার্ড।
উক্ত কার্ডের নম্বরগুলো মেশিনের মাধ্যমে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় লেনদেন সম্পাদন করা যায়। এ কার্ডের মাধ্যমে সহজে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে তহবিল স্থানান্তর ও আমানত হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। এ কার্যকে নগদ কার্ড, সম্পাদন কার্ড ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়।
৩. ক্রেডিট কার্ড: খুচরা ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর মধ্যে ক্রেডিট কার্ড একটি জনপ্রিয় প্রক্রিয়া। এটি এমন একটি কার্ড যা ব্যবহার করে ধারে পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের লেনদেন সম্পাদন করা যায়। এটি তাৎক্ষণিক নগদ অর্থের প্রয়োজন মেটায় এবং বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
সাধারণত ঋণ গ্রহণ ক্ষমতা থাকলে বা আমানতকারীর হিসাবে যথেষ্ট টাকা থাকলে গ্রাহককে ব্যাংক এ ধরনের প্লাস্টিক কার্ড সরবরাহ করে। সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে মক্কেলের লেনদেন পরিশোধের জন্য তার ঋণ হিসাব ডেবিট করা হয়। নির্দিষ্ট সংখ্যক দোকানে বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের জন্য বা ক্ষেত্রবিশেষে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ অর্থ উত্তোলনের জন্য এ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয়।
৪. বিক্রয় সেবা বিন্দু: বিক্রয় সেবা বিন্দুর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের সুবিধাজনক স্থানে সেবা প্রদান করে থাকে। পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের এ ব্যবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য বা সেবার 'দাতা ও গ্রহীতার হিসাব কার্যক্রমে ক্রেডিট ও ডেবিট করা হয়।
৫. চেকস্তূপ পরিষ্কারকরণ: চেকস্তূপ পরিষ্কারকরণ এমন একটি সেবা প্রক্রিয়া যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে বাতিলকৃত চেকগুলো ফেরত না দিয়ে নিজের নিকট রেখে দেয় এবং গ্রাহককে মাসিক বিবরণীর সাথে বাতিলকৃত চেকের বিবরণী সরবরাহ করে। বাতিলকৃত চেকগুলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ নির্দিষ্ট সংরক্ষণ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে বাতিলকৃত চেকগুলোর মাইক্রো ফিল্ম কপি রেখে চেকগুলো নষ্ট বা ধ্বংস করে ফেলা হয়।
৬. বাসগৃহভিত্তিক ব্যাংকিং: গ্রাহকদের নিজস্ব অবস্থানে রেখে ব্যাংক যে সকল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে তাকে বাসগৃহভিত্তিক ব্যাংকিং বলে। নিজস্ব গ্রাহকদের প্রয়োজনে ব্যাংক গ্রাহকের নিকটবর্তী শাখা হতে এ সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে। এ জন্য ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে তাকে উক্ত ব্যাংকের অফিসে যাবার প্রয়োজন হয় না। বাসগৃহভিত্তিক ব্যাংকিংসমূহের মধ্যে টেলিফোন বিল পরিশোধ, ভিডিও, ঘরোয়া ব্যাংকিং প্রভৃতি অন্যতম।
৭. খুচরা স্বয়ংক্রিয় বিকাশ ঘর: এটি এমন একটি সমন্বিত সেবা পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিশোধগুলো ইলেকট্রনিক উপায়ে বিনিময় এবং নিষ্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের মাধ্যমে কাগজী চেকের প্রতিকল্প এবং এগুলো মেশিনের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয় এবং একটি হিসাবে ডেবিট ও অন্য হিসাবকে ক্রেডিট করা হয়।
(খ) পাইকারি ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং
পাইকারী ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং হচ্ছে এমন এক ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে আন্তঃব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম সংঘটিত হয়। সাধারণত পাইকারী ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এ নিম্নলিখিত কার্যক্রমগুলো সম্পাদিত হয়ে থাকে:
১. নগদান ব্যবস্থাপনা: নগদান ব্যবস্থাপনা হলো নগদ অর্থের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যাতে প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। অন্যভাবে বলা যায়, নগদান ব্যবস্থাপনা বলতে মূলত চেক ও প্রাপ্য বিল সংগ্রহের গতিবেগ বৃদ্ধি, অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সযত্ন নিয়ন্ত্রণ, নগদান প্রবাহ মনিটরিং করা এবং অতিরিক্ত অলস অর্থ বিনিয়োগ করাকে বুঝানো হয়।
২. তারে তহবিল স্থানান্তর: ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং-এর একটি উল্লেখযোগ্য ফসল হলো তারে তহবিল স্থানান্তর। এটি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তহবিল প্রেরকের নিকট থেকে প্রাপকের নিকট দ্রুত ও সঠিক সময়ে তহবিল স্থানান্তর করা হয়।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর: এ পদ্ধতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের লেনদেন নিষ্পত্তি করে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান মূলত সরাসরি বেতন জমা দেয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় নিকাশঘর পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এছাড়া কিছু কিছু কোম্পানি সরাসরি জমা প্রদান ছাড়াও অন্যান্য উদ্দেশ্যেও এ সেবা গ্রহণ করছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে আধুনিক - ব্যাংকিং-এর অন্যতম সংযোজন হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এ ব্যাংক ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যা উপরিউক্ত আলোচনায় দেখানো হয়েছে।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য আলোচনা কর।
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকের লক্ষ্যসমূহ বর্ণনা কর।
বিশ্বে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এটি সমাজে পরিবর্তন আনয়ন করছে। তাই আমাদের সমাজে ও জাতীয় জীবনে যোগাযোগ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ভোক্তার জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনয়ন হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদেরকে সহজতর সেবা প্রদানে সক্ষম হচ্ছে। ফলে ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর মাধ্যমেই এটি সম্ভব হচ্ছে।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য: নিচে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং- এর উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো:
১. খরচ কমানো: ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এর একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো খরচ কমানো। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দ্রুত ও সহজে ব্যাংকিং কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। ফলে ব্যাংকের কর্মচারীর সংখ্যা হ্রাস পায় এবং ফলশ্রুতিতে ব্যয়ও হ্রাস পায়।
২. উন্নত সেবা প্রদানে: ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর অপর একটি উদ্দেশ্য হলো- সেবা প্রদান করা। ব্যাংকিং দ্রুত, সহজ সঠিক ও নিখুঁতভাবে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করতে সমর্থ হয় যা শারীরিকভাবে করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।
৩. দাম: দীর্ঘকালীন সময় বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে ব্যাংক টেলার মেশিন ব্যবহারের ফলে এবং শাখাসমূহের সংখ্যা হ্রাস করে ব্যাংকের ব্যয় যেমন হ্রাস করতে পারে, তেমন ইন্টারনেট ব্যবহারে লেনদেনের ব্যয়ও তেমনি হ্রাস পায়।
৪. গ্রাহক ভিত্তি: ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং গ্রাহক ভিত্তি সৃষ্টি করে ইন্টারনেট ব্যাংককে নতুন বাজারের সন্ধান দেয়।ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে যেহেতু ভৌগোলিক সীমা ও প্রতিবন্ধকতা নেই সেহেতু এ ধরনের ব্যাংকিং বেশি লোকের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা পৌছে দিতে পারে, যা প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকের গ্রাহক সৃষ্টি করে থাকে।
৫. সময় বাঁচানো: এর মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক কাগজি লেনদেন কমিয়ে আনা যায়। বিভিন্ন ধরনের লেজার বই সংরক্ষণের এখন আর প্রয়োজন নেই। এগুলো সব কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হয়। পূর্বে এটি লেনদেনের জন্য অনেকগুলো হাত হয়ে লেনদেনটি সম্পন্ন হতো। এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা হয়।
৬. মুনাফার পরিমাণ: ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং প্রবর্তনের ফলে একদিকে যেমন ব্যাংকিং ব্যয় হ্রাস পেয়েছে অন্যদিকে সেবার মান বৃদ্ধি এবং গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে সার্বিকভাবে ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
৭. দক্ষতা: ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং বস্তুত ব্যাংকের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। গ্রাহকরা ইন্টারনেটে প্রবেশ করে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করে। বস্তুত তাদের কোনো কাগজ ব্যবহার করতে হয় না। তাছাড়া টেলার ও কাউন্টিং মেশিন ব্যবহারের ফলে ভুল হবার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। এসব কারণে ব্যাংকের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৮. আয়ের বহুমুখিতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা সম্ভব হয় যা গতানুগতিক পদ্ধতিতে সম্ভব ছিল না। বিভিন্ন ধরনের সেবার ফি গ্রহণ করার মাধ্যমে আয়ের বহুমুখিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেবিট কার্ড ফি, ক্রেডিট কার্ড ফি প্রভৃতি দ্বারা আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৯. অভ্যন্তরীণ পরিবেশ উন্নয়ন: কাগজ নির্ভরতা হ্রাসের ফলে ব্যাংকে এখন আর আগের মতো কাগজ ও বইপত্রের স্তূপ হয় না। স্থানাভাব হ্রাস পেয়েছে। টেবিলে শুধুমাত্র কম্পিউটার তথাকায় কাজের পরিবেশের উন্নতি সাধন হয়েছে।
১০. প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বৃদ্ধি: ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বস্তুত ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাংকারদের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সেবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাংকসমূহ নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট হয়েছে।
১১. গ্রাহক সন্তুষ্টি: ব্যাংক ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদান করার মাধ্যমে নং- গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জন করা। গ্রাহক এখন নিজেই তথ্য সংগ্রহ, কর্ম ও আবেদনপত্র পূরণ, টাকা জমা দেওয়াসহ বহুবিধ কাজ নিজেই করতে পারে। অথবা ব্যাংক কর্মচারীদের বিরক্ত করা বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। গ্রাহকরা নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো অত্যন্ত তৃপ্তিসহকারে সম্পন্ন করে থাকে।
১২. শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি: ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বহুবিধ সুবিধা অর্জনের পাশাপাশি ব্যাংক নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানে পৌছায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যাংক নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়।
১৩. ইমেজ বৃদ্ধি: ই-ব্যাংকিং ব্যাংকের ইমেজ বৃদ্ধি করে। যে ব্যাংকে ইন্টারনেটের সুবিধা থাকে গ্রাহক সেখানে যায় অর্থাৎ সেই ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী হয়। গ্রাহক মনে করে এই ব্যাংকটি সমৃদ্ধতর, উন্নত ও ভালো সেবা দিবে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনায় ইলেক্ট্রনিক ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচিত হলো। এসব উদ্দেশ্য ছাড়াও এ ব্যাংকিং ব্যবস্থার আরো কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন- সময় মতো তথ্যপ্রাপ্তি দ্রুত অর্থ স্থানান্তর, সময় বাঁচানো, নির্ভুল লেনদেন, খরচ কম, হিসাবের নিরাপত্তা, আর্থিক বাজার কর্মকাণ্ডে সহায়তা ও হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর বৈশিষ্ট্য
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধর। অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি লিখ।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব অর্থনীতিতে ই-ব্যাংকিং সিস্টেম সাধারণ ব্যাংকিং সিষ্টেম এর সাথে বড় ধরনের পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। আধুনিক যুগে পুরো বিশ্বটাই একটি গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে পরিণত হয়েছে। মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যম ডিজিটাল সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে দিন দিন উন্নতি লাভ করছে।
ই-ব্যাংকিং প্রধানত তথ্য প্রযুক্তির কম্পিউটার এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের ই-ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং হলো Electronic Funds Transfer (EFT) কার্যক্রম যার কারণে গ্রাহক প্রযুক্তি ব্যবহার দ্বারা ব্যাংকিং সেবা পেতে পারে এবং যার কারণে গ্রাহক ঘরে বসেই তার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে মাত্র একটি বাটন চাপের মাধ্যমেই।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর বৈশিষ্ট্য: ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ভৌগোলিক বাধা দূরীকরণ: ভৌগোলিক বাধা বা আইনগত বাধা দূর করে গ্রাহক সেবা নিশ্চত করার ক্ষেত্রে ই-ব্যাংকিং সিস্টেম বর্তমানে খুবই কার্যকরী এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. বিনিয়োগ সেবা: গ্রাহক মূলধন বাজারে Initial public offering (IPO) তে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং সে বিনিয়োগ সেবা পেয়ে থাকে। তা ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
৩. সুচারুরূপে হিসাব বর্ণনা: হিসাবের যেকোনো সামগ্রিক তথ্যাদি যেমন হিসাবের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ হিসেবে আর্থিক বিবরণী, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিষয়ক প্রয়োজনীয় উপাত্তসহ অন্যান্য যেকোনো তথ্যসমূহ ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহক তার নির্দিষ্ট ব্যাংক এর তথ্যকেন্দ্র থেকে পেতে পারেন।
৪. তহবিল স্থানান্তর করা: গ্রাহকের হিসাবের যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিশ্বের অন্য যেকোনো হিসাবে দ্রুত সময়ে স্থানান্তর করা যায় এবং এটি সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
৫. বিল পরিশোধ: বর্তমানে গ্রাহক যেমন তার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্যাদি ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে তেমনি নিত্যপ্রয়োজনীয় বিল; যেমন- গ্যাস বিল, পানি বিল ও বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং পরিশোধ করা যায়।
৬. গোপনীয়তা রক্ষা: গ্রাহকরা তাদের নিজের হিসাবকে গোপনীয় আবরণে ই-ব্যাংকিং প্রযুক্তিগত আধুনিক কার্যক্রম দ্বারা সংরক্ষণ করতে পারে।
৭. অনুরোধকল্পে সেবা: চেক বইয়ের চাহিদা, Demand draft-stop echeque payment ও layout paint redemption ইত্যাদি সেবাসমূহ গ্রাহক ই-ব্যাংকিং কার্যক্রম এর অভাবে সেবা অনুরোধের ভিত্তিতে করে থাকে।
৮. সীমাবদ্ধতা এড়ানো: গ্রাহক প্রতিদিন 24 ঘণ্টা করে সপ্তাহে 7 দিন সময়ে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবের সাথে বিশ্বস্ততার সাথে ই-ব্যাংকিং দ্বারা যুক্ত থাকে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমানে ই-ব্যাংকিং এর ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র গ্রাহকের সুবিধা প্রদানের জন্য একইসাথে আন্তঃব্যাংকিং ও অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বর্তমানে virtual Banking ব্যবস্থার প্রবর্তনের চিন্তাভাবনা চলছে। এ ব্যাংকে সরাসরি কোন প্রকার মানব সম্পদ ব্যবহার না করে প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনার কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংয়ের কার্যাবলি
অথবা, ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংয়ের কার্যসমূহ কি কি আলোচনা কর।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের বিস্তৃতি যা ই-ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রমগুলোকে খুব সহজ করে তুলেছে। বর্তমানে মানব সমাজের কৃত কর্মকাণ্ড ও কর্ম তৎপরতায় ই-ব্যাংকিং প্রেষণাস্বরূপ হিসেবে এনেছে চাঞ্চল্য ও স্বস্তি এবং কর্মকাণ্ডে এনেছে আকর্ষণীয় ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সহজ সমাধান। ই-ব্যাংকিং দ্বারা গ্রাহক তথ্য ব্যাংকিং খাত তাদের স্ব-স্ব কর্মকাণ্ড তড়িৎ গতিতে সম্পাদন করতে পারছে।
ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং বা ই-ব্যাংকিং বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে সমাদৃত একটি পদ্ধতি। ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এর কার্যাবলি নিম্নে দেওয়া হলো:
১. হিসাব ব্যবস্থাপনা: ব্যাংকের বিভিন্ন রকম নিয়ম ও শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে গ্রাহক তার সংশ্লিষ্ট হিসাবে লেনদেন সীমা বৃদ্ধি করতে নিরাপত্তা কোড ও password পরিবর্তন হিসাব জমাবদ্ধকরণ ও হিসাব বিলুপ্ত করতে পারে না। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা হিসাব ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
২. বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ই সঠিক তথ্য পান: একজন ক্রেতা যখন কোনো পণ্য ক্রয় করে এবং ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে সেই পণ্যের দাম পরিশোধ করে তখন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই এ সম্পর্কে অবগত হন ও তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক তথ্য প্রাপ্ত হন। ই-ব্যাংকিং এর দ্বারা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হবার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বার্তা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছে E-mail এর মাধ্যমে পৌঁছে যায়।
৩. হিসাবের তথ্য খোঁজা: হিসাবে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ, উত্তোলিত অর্থের পরিমাণ, অন্যান্য হিসাব সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক তথ্যসমূহ যা গ্রাহকের সংশ্লিষ্ট হিসাবের সাথে সম্পর্কিত তা খুব সহজেই বের করতে বা খুঁজে পাওয়া যায় ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
৪. বৈদেশিক বিনিময়ের মাধ্যমে লেনদেন করা: বৈদেশিক বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন তথ্য/উপাত্তের উপর ভিত্তি করে গ্রাহক তার ব্যসায় পরিচালনা করে থাকেন। বৈদেশিক বাণিজ্য বা বৈদেশিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিময় হার জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক বিনিময় হার সহ অন্যান্য বিষয়সমূহ Online থেকে খুব সহজে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। ই-ব্যাংকিং এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. গ্রাহক সেবা: ই-ব্যাংকিং এর ব্যাংকিং পদ্ধতিতে গ্রাহক তার গোপন নিরাপত্তা কোড বা Password-এর মাধ্যমে তার হিসাবের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। ই-ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহক তার সেবা পূর্ণ নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তার সাথে পেয়ে থাকেন।
৬. কার্ডের কোনোরূপ ক্ষতি সাধন হলে ব্যাংককে অবহিত করা: গ্রাহকের কার্ড চুরি গেলে বা হারিয়ে গেলে, কোনোরূপ ক্ষতি সাধিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। কারণ ব্যাংক অবহিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাংকিং ব্যবসা ক্ষেত্রে এক বিপ্লবীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
৭. আর্থিক বা গচ্ছিত মূলধন/অর্থ স্থানান্তর করা: যেকোনে পরিমাণ অর্থ যেকোনো ধরনের হিসাব গ্রাহক অতি অল্প সময়ে কোনে ঝামেলা ছাড়াই তার প্রয়োজনমতো স্থানান্তর করতে পারবেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত অলোচনা মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং এর কার্যাবলি সম্পন্ন করে থাকে।