ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচন প্রক্রিয়া | Selection Procedure of Business Location

ব্যবসায়ের সফলতার ক্ষেত্রে অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় তাই হলো ব্যবসায়ের অবস্থান।

ব্যবসায়ের অবস্থান একবার নির্বাচন করা হলে তা সহজে পরিবর্তন করা যায় না বা পরিবর্তন করা গেলেও সেক্ষেত্রে জটিলতার জন্ম দেয়।

তাই ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচনে উদ্যোক্তাকে বেশ ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

১. তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ (Collection and analysis of data): ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচনের প্রথম কাজ হলো ব্যবসায় স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য স্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। সংগৃহীত এরূপ তথ্যকে এমনভাবে বিচার- বিশ্লেষণ করতে হবে যেন তা হতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বাজারের নৈকট্য, আর্থিক অবস্থা, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসায়ের স্থানীয়করণ ইত্যাদি বিষয়কে বিবেচনা করা উচিত।

২. বিকল্প অবস্থানসমূহ সনাক্তকরণ (Identifying alternative locations): তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে যে সকল স্থানে ব্যবসায় স্থাপন করা উচিত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয় সেগুলোকে সনাক্ত করা উচিত।

কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যত বেশি বিকল্প পাওয়া যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্য তত সহজ ও বাস্তব সম্মত হয়। এ কারণে ব্যবসায় স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে যতগুলো বিকল্প পাওয়া যায় সবগুলোকে এ ক্ষেত্রে সনাক্ত করা উচিত।

৩. বিকল্প অবস্থানসমূহ মূল্যায়ন (Evaluation of alternative locations): সনাক্তকরণকৃত বিকল্প অবস্থানগুলোকে এক্ষেত্রে ব্যাপক ও চূড়ান্তভাবে আবার মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য, যাতায়াত ব্যবস্থা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করে বিকল্পসমূহ হতে চূড়ান্ত বিকল্পগুলো বিবেচনায় রেখে অন্যান্য প্রাথমিক বিকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়। এ সকল চূড়ান্ত বিকল্প হতে উত্তম। বিকল্প চিহ্নিত করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

৪. উত্তম বিকল্প অবস্থান চিহ্নিতকরণ (Identifying best alternative location): এ ক্ষেত্রে সকল দিক বিবেচনায় যে বিকল্পটি উত্তম বলে বিবেচিত হয় তা চিহ্নিত করা হয় এবং অন্যান্যগুলো গ্রেডিং করে রেখে দেওয়া হয়।

যেমন: কোনো মুদি দোকানের স্থান নির্বাচনে গ্রেড-১ হতে পারে বাজারের সন্নিকটে, গ্রেড-২ হতে পারে তিন রাস্তার মোড়ে, গ্রেড-৩ হতে রাস্তার পার্শ্বে এবং গ্রেড-৪ হতে পারে গ্রামের অভ্যন্তরে। এভাবে গ্রেড-১ কে গ্রহণ করে বাকীগুলো বিকল্প সিদ্ধান্ত হিসেবে রেখে দেওয়া উচিত।

৫. ব্যবসায়ের অবস্থান সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Taking final decision about business location): ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচনের সর্বশেষ ধাপ বা স্তর হলো ব্যবসায়টি কোথায় স্থাপন করা হবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

সকল দিক বিবেচনায় যত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তত তাড়াতাড়ি সেখান হতে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচনে উপরে আলোচিত ধাপ বা স্তরগুলো একের পর এক অনুসরণ করা উচিত। এসকল ধাপ অনুসরণের ফলে উত্তম স্থান নির্বাচন করা সম্ভব হয় বলে অনেকে মনে করেন। তবে প্রয়োজনে এরূপ ধাপের সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url