এইচ.এস.সি অর্থনীতি ১ম পত্র ১ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সমাধান


১. অর্থনীতিতে সকল অভাব এক সাথে পূরণ করা সম্ভব হয় না কেন?
উত্তর: অর্থনীতিতে সকল অভাব এক সাথে পূরণ করা সম্ভব হয় না কারণ অসীম অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সীমিত। সৃষ্টির আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি মানুষ অভাবের সাথে। সংগ্রাম করে আসছে। একটি অভাব পূরণ হলে আর একটি অভাব নতুনরূপে দেখা দেয়। মানুষ এসব নতুন অভাব সম্পদের সাহায্যে পরুন। করে। কিন্তু অসীম অভাব পূরণের জন্য প্রাপ্ত সম্পদের পরিমাণ সীমিত। সীমিত এ সম্পদ দিয়ে মানুষ তার অসংখ্য অভাবের সামান্যই মেটাতে পারে । এ জন্য মানুষের পক্ষে সব অভাব এক সাথে পূরণ করা সম্ভবপর হয় না।

২. দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হয় কেন? ব্যাখ্যা করো। 
উত্তর: মানুষের অসীম অভাব আর সে তলনায় সম্পদের সীমাবদ্ধতার দরুন অর্থনীতিতে দৃষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হয় মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই । অর্থাৎ মানুষের চাহিদা অসীম। সম্পদের পরিমাণ সীমিত হওয়ার কারণে মানুষের সকল অভাব আর সকল প্রকার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজন হয় সম্পদের। কিন্তু চাহিদা পূরণ সম্ভবপর হয় না। মূলত দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই। কেননা অভাব কম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতো না।

৩. অভাব অসীম বলা হয় কেন? 
উত্তর: মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই। একটি অভাব পূরণ হলে নতুন নতুন অভাবের আবির্ভাব ঘটে। যেমন— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয়  অভাব। এ অভাব পূরণ হলে সে উন্নত জীবনযাপন করতে চায়। এভাবে মানুষের অভাবের শেষ নেই। একারণে বলা হয় অভাব অসীম। 

৪. অভাব পূরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন সমস্যা দেখা যায় কেন? 
উত্তর: সমাজে অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত হওয়ায় নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয়। মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু এই অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত। তাই কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সব অভাব একসাথে পূরণ করা সম্ভব হয় না, আবার সব অভাব সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই ব্যক্তিকে তার অভাব গুরুত্ব অনুসারে কোনো অভাব আগে এবং কোনো অভাব পরে পূরণ করতে হয়। এভাবেই অভাব পূরণে নির্বাচন সমস্যা দেখা দেয়।

৫. উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বিদ্যমান প্রযুক্তি ও নির্দিষ্ট পরিমাণ উপকরণ দ্বারা উৎপাদিত দুটি দ্রব্যের সম্ভাব্য বিভিন্ন সংমিশ্রণ যে রেখার বিভিন্ন বিন্দুতে নির্দেশ করা হয় তাকে উৎপাদন সম্ভাবনা রেখা (PPC) বলে। মনে করি, একটি সমাজ তার সীমাবদ্ধ সম্পদের সাহায্যে ১ লক্ষ বই অথবা ১ কোটি কলম তৈরি করতে পারে। সমাজ ইচ্ছা করলে কলম উৎপাদন হ্রাস করে বই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে । আবার একই পরিমাণ সম্পদের সাহায্যে বই ও কলমের বিভিন্ন সংমিশ্রণ উৎপাদন করতে পারে। এভাবে সীমিত সম্পদের সাহায্যে দুটি দ্রব্যের বিভিন্ন সংমিশ্রণ উৎপাদন সম্ভাবনা রেখার (PPC) সাহায্যে দেখানো যায়।

৬. সুযোগ ব্যয়ের উদ্ভব ঘটে কেন? 
উত্তর: মানুষের অভাব অসীম কিন্তু সম্পদ সীমিত হওয়ার দরুন নির্বাচন সমস্যায় পড়তে হয়। মূলত এখান থেকেই সুযোগ ব্যয় ধারণার সৃষ্টি। কোনো একটি দ্রব্য পাওয়ার জন্য অন্য দ্রব্যটির উৎপাদন / ভোগ যে পরিমাণ ত্যাগ করতে হয়, এই ভ্যাগকৃত পরিমাণই হলো প্রথম দ্রব্যটির সুযোগ ব্যয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করলে বিশ কুইন্টাল ধান উৎপাদন করা যায়। আবার পাট চাষ করলে দশ কুইন্টাল পাট উৎপাদন করা যেত। এক্ষেত্রে বিশ কুইন্টাল ধানের সুযোগ ব্যয় হলো দশ কুইন্টাল পাট।

৭. কোন অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকে না?
উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা ধনতন্ত্রে স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে সরকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়না বরং ক্রেতা বিক্রেতার পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার দ্বারা বাজারে দাম নির্ধারিত হয়। বাজার চাহিদা ও বাজার যোগান পণ্য ও সেবার দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

৮. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ভোক্তার সার্বভৌমত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় একটি লক্ষণীয় দিক বা বৈশিষ্ট্য হলো ভোক্তার সার্বভৌমত্ব এ অর্থব্যবস্থায় উদ্যোক্তারা মূলত ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ব্যবস্থা করে। অন্যদিকে, ভোক্তারা নিজ নিজ সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী তা ভোগ করে। এক্ষেত্রে ভোক্তারা যেকোনো দ্রব্য বা সেবা যেকোনো পরিমাণে এবং যেকোনো সময় অবাধে ভোগ করতে পারে। তাই দ্রব্য ও সেব্য ভোগের ব্যাপারে ভোক্তার অবাধ স্বাধীনতাই হলো ভোক্তার সার্বভৌমত্ব।

৯. মিশ্র অর্থব্যবস্থায় কীভাবে দাম নির্ধারিত হয়?
উত্তর: মিশ্র অর্থনীতিতে ধনতন্ত্রের ন্যায় স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার দ্বারা দাম নির্ধারিত হয়। ক্রেতা - বিক্রেতার পারস্পরিক ক্রিয়া - প্রতিক্রিয়ার দ্বারা বাজারে দাম নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ বাজারে চাহিদা ও যোগান এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া দ্রব্যের দাম তার চাহিদা ও যোগান দ্বারা নির্ধারিত হলেও দামস্তরের অতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতি এখানে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের দামও সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

১০. মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে শ্রেষ্ঠ অর্থব্যবস্থা বলে মনে করা হয় কেন? 
উত্তর: মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয় বলে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে শ্রেষ্ঠ অর্থব্যবস্থা বলা যায়। ধনতন্ত্রের ন্যায় মিশ্র অর্থনীতিতে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা, মুনাফা অর্জন ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যাবলির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু মৌলিক শিল্প কারখানা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা - বাণিজ্য সরকারি খাতে পরিচালনা করা হয় যা সমাজতন্ত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)। তাই বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মাঝামাঝি একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বেছে নেয়া হয়েছে। এটিই মিশ্র অর্থব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। তাই অনেকে মিশ্র অর্থব্যবস্থাকে শ্রেষ্ঠ অর্থব্যবস্থা বলে মনে করেন।

১১. ব্যষ্টিক অর্থনীতি কাকে বলে? 
উত্তর: অর্থনীতির যে শাখা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় বা বিভিন্ন সমস্যা পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করে তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। ইংরেজি 'Micro' শব্দটি গ্রিক শব্দ Mikros থেকে এসেছে; যার অর্থ ক্ষুদ্র বা আংশিক। যেমন একজন ভোক্তা বা উৎপাদকের আচরণ, একটি দ্রব্যের চাহিদা বা যোগান, একজন ব্যক্তির উপযোগ, ব্যক্তির আয় - ব্যয় ও সঞ্জয়, একটি ফার্মের উৎপাদন ইত্যাদি পৃথক পৃথকভাবে ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে আলোচনা করা হয়। ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক ঘটনাকে একক বা ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url