শিল্পের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য |Concept of Industry

প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বা কাঁচামাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রস্তুত প্রাকৃতিক সম্পদ, কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মাধ্যমিক বা চূড়ান্ত শিল্প পণ্যদ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলা হয়। শিল্প হলো উৎপাদনের বাহন। এটি পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। মানুষ কোনো জিনিস সৃষ্টি করতে পারে না; শুধু রূপান্তর করতে পারে।
 
প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য তাতে রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযোগ (Utility) সৃষ্টি করা হয়। এ উপযোগ সৃষ্টির কাজকে উৎপাদন বলা হয়। তাই বলা যায়, শিল্পের কাজ হলো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করা। বনের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি, তুলা থেকে কাপড় তৈরি, সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ প্রভৃতি শিল্পের কাজ।

জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ - তে শিল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে,
পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংযোজন এবং পরবর্তীতে উৎপাদিত পণ্যের পুনঃসামঞ্জস্যকরণ ও প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতকরণ কাজ।

সি. বি. গুপ্ত বলেন,
শিল্প হলো ব্যবসায়ের সেই শাখা, যা পণ্য বা সেবা উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত।
শিল্পের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য

শিল্পের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Industry 


সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালকে ব্যবহারযোগ্য পণ্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলে। শিল্পের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বা দিক আছে, যা অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজ থেকে একে আলাদা করে থাকে। নিচে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:

১. ব্যবসায়ের শাখা (Branch of business): শিল্প ব্যবসায়ের প্রথম ধাপ ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ব্যবসায়িক কাজের সূচনা হয় শিল্পের মাধ্যমে। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ের অন্যান্য কাজ পরিচালনা করা হয়। আর শিল্পের কাজে সফলতার ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়ের সফলতা।

২. মুনাফা অর্জন (Earning profit): কোনো কাজ সম্পাদনের বিপরীতে পাওয়া আর্থিক সুবিধা হলো মুনাফা। শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য না থাকলে, অধিকাংশ ব্যবসায়ের শিল্প সংক্রান্ত কাজ বন্ধ হয়ে যেত। তবে এক্ষেত্রে মুনাফা অর্জনে কিছুটা বিলম্ব হয়।

৩. উৎপাদনের সাথে জড়িত (Involved in production): ক্রেতা বা ভোক্তার অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন করাকে শিল্প বলে। কাঁচামাল ব্যবহার করে নতুন উপযোগ সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করাই শিল্পের কাজ। যেমন- তুলা থেকে সুতা তৈরি, সুতা থেকে কাপড় তৈরি, কাপড় থেকে পোশাক তৈরি।

৪. রূপগত উপযোগ সৃষ্টি (Creating mutational utility): কোনো জিনিসের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। শিল্প প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদগুলোকে রূপান্তর করে নতুন পণ্য তৈরির মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। যেমন শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়।

৫. অধিক পুঁজি ও ঝুঁকি (High risk and capital): আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলা হয়। শিল্পের কাজ সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজন হয়। কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় জমি, কাজ সম্পাদনের জন্য শ্রম ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এসব কাজে বেশি ঝুঁকি নিতে হয়। শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে, আবার না ও পারে। তাই বলা যায়, শিল্পের সাথে ঝুঁকি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

৬. সৃজনশীল কাজ (Creative work): মেধা ও মননশীলতা দিয়ে নতুন কিছু করাই সৃজনশীল কাজ। শিল্প সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন পণ্য উৎপাদন করে। এছাড়া এটি বিদ্যমান পণ্যের মান প্রতিনিয়ত পরিমার্জন ও উন্নয়ন করে। সাধারণত উৎপাদনের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা দেখাতে পারলে সহজেই শিল্পের উদ্দেশ্য সফল হয়।

৭. কেন্দ্রীভূত কাজ (Centralized work): ব্যবসায়ের অন্যান্য কাজ সাধারণত বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়। কিন্তু শিল্পের কাজটি ব্যতিক্রম। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট স্থানে করা হয়। যেমন- কারখানাতে পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। সম্পাদিত হয়। তাই বলা যায়, শিল্পের কাজগুলো অনেকটা সুসংগঠিত ও কেন্দ্রীভূত হয়।

৮. ফলাফল লাভে বিলম্ব (Delay at gaining result): সাধারণত যেকোনো শিল্প গড়তে দীর্ঘ সময় ও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কাঁচামাল, শ্রমিক, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ জোগাড় করতে প্রচুর সময় লাগে। পণ্যদ্রব্য বিক্রয়কে একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পর উৎপাদনকারী লাভের মুখ দেখে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে ফল লাভে আরও বেশি দেরি হয়ে থাকে। তাই শিল্পের ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

৯. উন্নয়নের প্রবেশদ্বার (Gateway of development): যেকোনো দেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য সেখানে অবশ্যই শিল্পের বিস্তার ঘটাতে হয়। একটি শিল্পের সুবাদে আরও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ের সব শাখারই উন্নয়ন হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের গতি বাড়তে থাকে। এজন্য শিল্পকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবেশদ্বার বলা হয়।

সুতরাং, ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও প্রথম ধাপ হিসেবে শিল্পের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি আছে। আর এসব বৈশিষ্ট্য সংবলিত কাজকেই শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url