ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য | Key features of Business
ব্যবসায় হলো মুনাফার আশায় সম্পাদিত বৈধ অর্থনৈতিক কাজের সমষ্টি। কোনো কাজকে ব্যবসায় বলে গণ্য হতে হলে এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। নিচে ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হলো:
১. মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য (Goal to earn profit): প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত ফল বা মূল অভিপ্রায়কে লক্ষ্য বলা হয়। ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের চেষ্টা। মুনাফা অর্জনের প্রতিষ্ঠান / ব্যক্তির মূল লক্ষ্যে ব্যবসায়ের সব কাজ ঝুঁকি নিয়ে পরিচালিত হয়। তাই মুনাফাকে ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার ইচ্ছা বা কাঙ্ক্ষিত ফল বলা হয়। যে কাজ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না, তা ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত হবে না।
২. আইনগত বৈধতা (Legality): ব্যবসায় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈধ হতে হয়। অবৈধভাবে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও সেবা দিয়ে অর্থ উপার্জন করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। তাই, চোরাকারবারি, মানবপাচার, মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা প্রভৃতি ব্যবসায় বলে বিবেচিত হয় না।
৩. আর্থিক মূল্য (Monetary value): ব্যবসায় একটি অর্থনৈতিক কাজ । অর্থ দ্বারা ব্যবসায়ের আর্থিক মূল্য প্রতিটি কাজের মূল্য নিরূপণ করা হয়। অর্থের মাপকাঠিতে যেসব কাজের মূল্য নিরূপণ করা যায়। অর্থের মাধ্যমে মূল্য না, তা ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত নয়।
৪. উপযোগ সৃষ্টি (Creating utility): কোনো কিছুর অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। এই উপযোগ ব্যবসায় পণ্য ও সেবাকর্মের উপযোগ সৃষ্টি করে । এ উপযোগ রূপগত, স্বত্বগত, স্থানগত, কালগত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। শিল্পের মাধ্যমে বস্তুর রূপগত, বণ্টনের মাধ্যমে স্বত্ত্বগত, পরিবহনের মাধ্যমে স্থানগত ও গুদামজাতকরণের মাধ্যমে কাল বা সময়গত উপযোগ তৈরি হয়। এর দ্বারা মানুষের বিভিন্ন ধরনের অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়।
৫. ক্রয়-বিক্রয়ের পৌনঃপুনিকতা (Recurring purchase and sale): পণ্যদ্রব্য বারবার কেনা বেচাকে লেনদেনের পৌনঃপুনিকতা বলে। অর্থাৎ ব্যবসায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংঘটিত হওয়া পণ্যদ্রব্যের কেনা -বেচার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। যেমন: নিয়মিতভাবে আসবাবপত্র তৈরি করে তা বিক্রি করলে ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। কিন্তু বাড়িতে ব্যবহৃত আসবাবপত্র কারও কাছে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলে তা ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৬. ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা (Risk and uncertainty): আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলা হয়। আর ভবিষ্যৎ অজানা অবস্থাকে বলা হয় অনিশ্চয়তা। ব্যবসায়ের সব পর্যায়েই ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। ব্যবসায়ে সব সময় লাভ বা মুনাফা হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এতে লোকসানের আশঙ্কাও থাকে। তাই ব্যবসায়ীকে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলতে হয়। কোথাও বিনিয়োগ করলে, তাতে আয় নির্ধারিত থাকলে সেক্ষেত্রে ঝুঁকির অনুপস্থিতির কারণে তা ব্যবসায় বলে বিবেচিত হয় না।
৭. উদ্যোগ গ্রহণ (Taking initiative): সাধারণভাবে কোনো কাজের প্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলা উদ্যোগ হয়। অর্থাৎ স্বাধীনভাবে কোনো কিছু শুরু করাকে উদ্যোগ বলে। ব্যবসায় গঠন করতে হলে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে প্রাথমিক উদ্যোগ নিতে হয়। যে ব্যক্তি ব্যবসায় গঠনের উদ্যোগ নেন, তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়। উদ্যোক্তা ছাড়া কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠিত হতে পারে না।
৮. পণ্যদ্রব্য ও সেবা উৎপাদন (Producing product and service): মানুষের বিভিন্নমুখী অভাব ও চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের প্রয়োজন হয়। ব্যবসায় প্রয়োজন মতো সম্পদ সংগ্রহ করে তাতে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম সরবরাহ করে থাকে।
৯. পণ্যদ্রব্য ও সেবা বণ্টন (Distribution of product and service): ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে পণ্যদ্রব্য ও সেবা বণ্টন করে। তার কাজ হলো মানুষের অভাবের ধরন জেনে সে অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য ও সেবা সরবরাহ করা। তাই, পণ্যদ্রব্যের বণ্টন ও সরবরাহ ব্যবসায়ের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।
১০. সেবামূলক মনোভাৰ (Service motive): ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের (ক্রেতা-ভোক্তা, কর্মী, পাওনাদার, সরকার) স্বার্থ রক্ষা করে ব্যবসায় পরিচালনা করাকে সেবামূলক মনোভাব বলা হয়। যেমন: ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ , কর্মীদের জন্য সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সৃষ্টি, সরকারকে সময়মতো রাজস্ব দেওয়া প্রভৃতি। মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি এরূপ সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হয়।
১১. নমনীয়তা (Flexibility): পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধন বা পরিবর্তন করার সুযোগকে নমনীয়তা বলা হয়। মানুষের চাহিদা, পছন্দ, রুচি প্রভৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ব্যবসায়কে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়।
১২. স্বাধীন পেশা / বৃত্তি (Free profession): স্বাধীনভাবে কাজ করা ব্যবসায়ের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। ব্যবসায়ী তার নিজস্ব চিন্তা- চেতনা ও ধ্যান -ধারণা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করেন। এটি স্বাধীন পেশা হওয়ায় ব্যবসায়ী সব ধরনের চাপ ও বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। এজন্য অনেকে চাকরির পরিবর্তে ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে নিয়ে থাকেন।
সুতরাং, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবসায়কে মানুষের অন্যান্য সাধারণ কাজ থেকে আলাদা করেছে। তাই কোনো কাজকে ব্যবসায় হিসেবে স্বীকৃত হতে হলে এসব বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: ব্যবসায়ের ধারণা
Thank you so much Vaiya🥰
ডিগ্রি ১ম বর্ষ হিসাব বিজ্ঞানের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উওর চাই দিবেন প্লিজ। 🥰