গ্রামীণ ব্যাংক Grameen Bank: Bank for the Poor

গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত একটি মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা গরিব মানুষদের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সাহায্য করার জন্য কাজ করে। এই ব্যাংকটি প্রায়ই বিশ্বব্যাপী "মাইক্রোক্রেডিট আন্দোলনের" একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং এজন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
গ্রামীণ ব্যাংক

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট


১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের শুরু হয়। এটি প্রথমে একটি গবেষণামূলক প্রকল্প হিসেবে শুরু হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্র কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। ড. ইউনূস উপলব্ধি করেছিলেন যে, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রচলিত ব্যাংকগুলো সাধারণত দরিদ্র মানুষদের ঋণ দিতে চায় না, কারণ তারা মনে করে এই মানুষগুলো ঋণ ফেরত দিতে সক্ষম হবে না। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস একটি নতুন ব্যাংকিং মডেল তৈরি করেন যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ


ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি একটি গ্রাম জোবরা থেকে ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাটি শুরু করেন। তখন বাংলাদেশ সাম্প্রতিক স্বাধীনতার পর একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। কৃষক এবং শ্রমিকদের মূলধনের অভাব ছিল, এবং তারা ঋণ নেওয়ার জন্য ঋণ শার্ক বা মহাজনদের কাছে যেতে বাধ্য ছিল, যারা উচ্চ সুদে ঋণ দিত এবং তাদের নিঃস্ব করে ফেলত।

এই প্রেক্ষাপটে, ড. ইউনূস স্থানীয় ৪২ জনের একটি দলকে ৮৫৬ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন, যা ছিল তাদের নিজস্ব ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য। তাদের আত্মবিশ্বাস ও উদ্যোক্তা মানসিকতা বৃদ্ধি পেয়েছিল এই ঋণের মাধ্যমে।

১৯৮৩ সালে, সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটি "গ্রামীণ ব্যাংক" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাংক, কিন্তু অন্যান্য ব্যাংক থেকে ভিন্নভাবে পরিচালিত। ব্যাংকটি সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে কাজ করে।


গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি ও বিকাশ


গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনের ফলাফল, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ একটি নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়। এই প্রেক্ষাপটে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা নিয়ে আসেন, যা পরবর্তীতে একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের রূপ নেয়।

ড. ইউনূসের উদ্যোগটি শুরু হয় ১৯৭৬ সালে, যখন তিনি নিজের অর্থ দিয়ে একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেন চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের ৪২ জন দরিদ্র মহিলাকে। তিনি প্রত্যক্ষ করেন যে, এই ছোট ঋণগুলি গরিব মানুষদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। তাদের এই অর্থ ফেরত দেয়ার হারও অত্যন্ত উচ্চ ছিল। এরপর থেকে এই মডেলটি আরো বিস্তৃত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম রাখা হয় "গ্রামীণ ব্যাংক"।

গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো ও পরিচালনা


গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলটি প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার থেকে ভিন্ন। এটি মূলত সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এর মালিকানাও আংশিকভাবে ঋণগ্রহীতাদের হাতে থাকে। ব্যাংকটি "সামাজিক ব্যবসা" ধারণার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়, যার প্রধান উদ্দেশ্য লাভের পরিবর্তে সামাজিক সমস্যা সমাধান।

গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের ৯৭% নারী। এটি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। ব্যাংকের নিয়মিত ঋণ গ্রুপের সদস্যরা সপ্তাহে একবার মিলিত হন এবং সেখানে তারা তাদের আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। এই মডেলটি ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে সামাজিক সহায়তার একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যা ঋণগ্রহণ এবং তার সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে।

গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম


গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কাজ হল দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত মহিলাদের, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা। এই ঋণ সাধারণত ছোট পরিমাণে হয় এবং এটি সাধারণত কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই প্রদান করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণের জন্য যেসব মানুষ যোগ্য হন, তারা সাধারণত একসঙ্গে একটি দল গঠন করেন, যা "ঋণ গ্রুপ" নামে পরিচিত। এই দলটি সদস্যদের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি বোধ তৈরি করে এবং ঋণের প্রতিটি সদস্যকে অন্য সদস্যদের জন্য দায়ী করে তোলে। ফলে, ঋণের ফেরত দেয়ার হার অত্যন্ত উচ্চ হয়, যা প্রায় ৯৭%।

গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মসূচি ও মডেল


গ্রামীণ ব্যাংক তার কাজের মধ্যে "গরীবের ব্যাংক" নামে পরিচিত। ব্যাংকের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরি করা, যা দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য এবং উপযোগী হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলটি নিম্নলিখিত মূলনীতি ও কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:

ক্ষুদ্র ঋণ (Microcredit): গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে মূলত দরিদ্র মানুষদের, বিশেষ করে মহিলাদের। এই ঋণ সাধারণত ব্যবসা শুরু করতে, শিক্ষা ব্যয় মেটাতে বা ঘর নির্মাণ করতে সহায়ক। এই ঋণগুলো সামান্য সুদে এবং কোনোরূপ জামানত ছাড়াই প্রদান করা হয়।

গ্রুপ ঋণ: গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ প্রদান ব্যবস্থাটি ঋণ গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পাঁচজনের একটি গ্রুপ ঋণ নেয় এবং তারা পরস্পরের ঋণের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যদি একজন সদস্য ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্য সদস্যরা তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই মডেলটি ঋণ ফেরতের হার বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন: গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৯৭% নারী, যা নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

সঞ্চয়ী প্রকল্প: ঋণ গ্রহণের পাশাপাশি, গ্রামীণ ব্যাংক সঞ্চয়ী প্রকল্পও চালায়। প্রতিটি সদস্যকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য সহায়ক হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: গ্রামীণ ব্যাংক শুধু ঋণ প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পাশাপাশি শিক্ষার প্রসার এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্যও কাজ করে। ব্যাংকটি তার ঋণগ্রহীতাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ঋণ প্রদান করে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব


গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। তারা নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে পেরেছে, সন্তানদের শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করতে পেরেছে, এবং নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মডেল আজ সারা বিশ্বে অনুকরণ করা হচ্ছে, এবং মাইক্রোক্রেডিট মডেলটি দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর উপায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে, গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। কিছু সমালোচক দাবি করেন যে, উচ্চ সুদের হার দরিদ্রদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, এই সুদের হার মূলত ব্যাংকের নিজস্ব পরিচালন ব্যয় কভার করার জন্য ব্যবহার হয়, এবং ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সাফল্যের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সাফল্য ও সাফল্যের পেছনের কারণ


গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

মহিলা সদস্যদের উপর ফোকাস: গ্রামীণ ব্যাংক মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেয়। মহিলারা সাধারণত পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরো পরিবার উপকৃত হয়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা: ঋণ গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যকে অন্যদের সফলতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে হয়। এই সামাজিক দায়বদ্ধতা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উচ্চ সাফল্যের হার নিশ্চিত করে।

প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা: গ্রামীণ ব্যাংক শুধুমাত্র ঋণ প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাও প্রদান করে। ফলে, তারা ঋণকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং নিজেদের জীবনের মান উন্নত করতে পারে।

সামাজিক ব্যবসার মডেল: গ্রামীণ ব্যাংক লাভকে প্রাধান্য না দিয়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানে মনোনিবেশ করে। ব্যাংককে একটি সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেখানে সদস্যদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি প্রধান লক্ষ্য। এই মডেলের মাধ্যমে, গ্রামীণ ব্যাংক শুধুমাত্র আর্থিক সেবা প্রদান করে না, বরং দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার উন্নয়নের মতো সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। এভাবেই ব্যাংকটি তার সদস্যদের জন্য টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করেছে।

ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান: গ্রামীণ ব্যাংক এমন ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে, যারা সাধারণত প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে ব্যর্থ হন। এসব ঋণ তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে।

নারী উদ্যোক্তা: গ্রামীণ ব্যাংক মূলত নারীদের ঋণ প্রদান করে, কারণ নারীরা প্রাপ্ত ঋণকে পরিবারের কল্যাণের জন্য বেশি ব্যয় করে। ফলে, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

গ্রুপ-ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা: ঋণ গ্রহণকারীরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্রুপের সদস্যরা একে অপরকে সহায়তা করে এবং একজন সদস্য ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হলে গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা দায়িত্ব নেয়। এই পদ্ধতি ঋণ পরিশোধের হার বৃদ্ধি করেছে।

সুদের হার নিম্ন: গ্রামীণ ব্যাংক সুদের হার কম রাখে, যাতে দরিদ্র মানুষ সহজে ঋণ নিতে পারে এবং তা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়।

উদ্ভাবনী ঋণ পদ্ধতি: গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের ঋণ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যা বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য উপযোগী।

এই কারণগুলো গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যের মূলে রয়েছে এবং বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

উপসংহার

গ্রামীণ ব্যাংক একটি অনন্য উদ্যোগ, যা বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকর অর্থনৈতিক মুক্তির পথ তৈরি করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ ও উদ্ভাবন পৃথিবীজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যদিও কিছু সমালোচনা আছে, তবে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য এটিকে একটি বিশ্বমানের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url