উৎপাদন ক্ষমতার প্রকারভেদ | Types of Production Capacity

কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার সম্পদ ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে তাই হলো- উৎপাদন ক্ষমতা। এরূপ উৎপাদন ক্ষমতা কিন্তু সকল ক্ষেত্রে একইরূপ হয় না বা একই ধারণার আলোকে উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করা যায় না।

উৎপাদন ক্ষমতার ধারণা ব্যাখ্যার আলোকে উৎপাদন ক্ষমতাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা | Peak capacity


স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়া, সর্বোচ্চ যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা উৎপাদন করতে পারে তাই হলো সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা। এ সম্পর্কে Krajewski and Ritzman (ক্রাজেসকি এবং রিজম্যান) বলেছেন,
অনুকূল পরিবেশে কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়া বা সুবিধা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ উৎপাদন সম্ভব তাকে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা বলে। সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতায় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, শ্রমিক-কর্মী, ব্যবস্থাপনা প্রচেষ্টা ইত্যাদির সর্বোচ্চ ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান অবিরামভাবে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে না, এতে পণ্য বা সেবা মানের অবনতি ঘটে এবং কার্য পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে।

প্রকৌশলগত উৎপাদন ক্ষমতা | Design or rated capacity


সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতাকে যখন শুধুমাত্র যন্ত্রের উৎপাদন ক্ষমতার আলোকে নির্ধারণ করা হয় তখন তাকে প্রকৌশলগত উৎপাদন ক্ষমতা বলে। এ সম্পর্কে Krajewski and Ritzman (ক্রাজেসকি এবং রিজম্যান) বলেছেন,

যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বার্ষিক সর্বোচ্চ সে পরিমাণ উৎপাদন করা হয় তার কৌশলগত মূল্যায়নকে প্রকৌশলগত উৎপাদন ক্ষমতা বলে।

সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতায় যেখানে উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল উপাদানকে বিবেচনা করা হয়, সেখানে প্রকৌশলগত উৎপাদন ক্ষমতায় শুধুমাত্র যন্ত্রের উৎপাদন ক্ষমতাকে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত দেখা যায়, কোনো মেশিনের গায়ে উক্ত মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা লেখা থাকে, যা প্রকৌশলগত উৎপাদন ক্ষমতার উদাহরণু।

কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতা | Effective/System capacity


একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো প্রক্রিয়া তার সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে মিতব্যয়িতার সাথে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা উৎপাদন করতে পারে তাই হলো কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতা। এ সম্পর্কে Krajewski and Ritzman (ক্রাজেসকি এবং রিজম্যান) বলেছেন,
কোনো স্বাভাবিক পরিবেশে অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের মাধ্যমে কোনো প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ যে পরিমাণ উৎপাদনে সক্ষম হয় তাকে কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতা বলে।
সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতায় মিতব্যয়িতার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব না দিলেও কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতায় মিতব্যয়িতার বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতার সাথে ব্যয় সাশ্রয়ের বিষয়টি জড়িত।

প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা | Actual production capacity


প্রকৃত উৎপাদনের বিষয়টি উৎপাদিত পণ্য বা সেবার (Output) উপর নির্ভর করে। এটি নির্ণয়ে নিট উৎপাদনের পরিমাণকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি প্রক্রিয়া থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ উৎপাদিত পণ্য (Output) পাওয়া যায়, তাই হলো প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা। 

সাধারণত উৎপাদন ক্ষমতার বর্তমান ব্যবহারের হার নির্ণয়ের জন্য প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো- প্রক্রিয়া ক্ষমতা অপেক্ষা প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা। সকল সময়ই কম হয়।

কাম্য উৎপাদন ক্ষমতা | Desired / Expected production capacity


সকল দিক বিবেচনায় যে উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলকর বলে বিবেচিত হয়, কাঙ্ক্ষিত সেই উৎপাদন ক্ষমতাকে কাম্য বা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ক্ষমতা বলে। কার্যকর উৎপাদন ক্ষমতায় শুধুমাত্র মিতব্যয়িতার বিষয়টিকে বিবেচনা করা হলেও কাম্য উৎপাদন ক্ষমতার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল বিষয়কে বিবেচনা করা হয়।

এক্ষেত্রে জনবল, বিক্রয়ের পরিমাণ, আর্থিক অবস্থা, প্রতিযোগিতার ধরন, মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা ইত্যাদি নানান বিষয়কে বিবেচনা করে কাম্য উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়। এ সকল বিষয় বিবেচনা করেই কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাম্য উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url