উদ্যোগের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং কার্যাবলী| Entrepreneurship concept, features and functions

উদ্যোগের ধারণা| Concept of Entrepreneurship


ইংরেজি শব্দ Entrepreneurship এর বাংলা পরিভাষা হচ্ছে উদ্যোগ বা ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ। আর Entrepreneur শব্দটি ফরাসি শব্দ Entreprender থেকে উদ্ভব হয়েছে। এর অর্থ হলো ‘To undertake’ অর্থাৎ কোনো কিছু করার দায়িত্ব নেওয়া। তাই বলা যায়, দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু শুরু করাই হলো উদ্যোগ। আর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হলে তাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলা হয়। 

ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উদ্যোগ বলতে মুনাফার আশায় ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়াকে বোঝায়। ব্যাপক অর্থে, মুনাফার লক্ষ্যে ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণগুলো একত্র করে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠন ও তা সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার কর্মপ্রচেষ্টাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলা হয়। যেমন: হোটেল-রেস্তোরাঁ পরিচালনা, পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ, জমি লিজ নিয়ে বাগান করা, আম কিনে আচার তৈরি করে বিক্রি প্রভৃতি।

ড. এ. আর. খান এর মতে,
ঝুঁকি নেওয়া এবং শিল্পোদ্যোক্তার কার্যাবলিই শিল্পোদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত।
উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগের নিম্নোক্ত ধারণা পাওয়া যায়:

১. এটি একটি সৃজনশীল কাজ।
২. এটি উৎপাদনের উপকরণের কার্যকর ব্যবহারের সাথে জড়িত।
৩. এটি ভবিষ্যৎ ব্যবসায়ী সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা সমূহের পূর্বানুমানের সাথে জড়িত।
৪. নতুন পণ্য, সেবা বা ধারণার উদ্ভাবন, উৎপাদনের নতুন কৌশল প্রবর্তন, বাজারের প্রচলন, কাঁচামালের নতুন উৎসের সন্ধান এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রকল্পের কাজ।

অতএব,‌ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণ সমূহের একত্র করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে ব্যবসায় উদ্যোগ বা শিল্পোদ্যোগ বলে।
উদ্যোগের ধারণা, বৈশিষ্ট্য এবং কার্যাবলী

শিল্পোদ্যোক্তার ধারণা | Concept of Entrepreneur


যিনি ব্যবসায়ের উদ্যোগ নেন তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে ফলাফল অনিশ্চিত জেনেও ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে সফল হওয়ার চেষ্টা করেন, তিনিই ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হলেন একটি ব্যবসায়ের পরিবর্তনের রূপকার (Change agent)।

শিল্পোদ্যোক্তা নতুন কোনো পণ্য বা ধ্যান-ধারণা উদ্ভাবন করে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। তিনি উৎপাদনের উপকরণগুলোর মধ্যে সমন্বয় করেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ও ঝুঁকি নিয়ে সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করেন।

আমেরিকার ফোর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ, জাপানের ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটসুসিটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কনোকে ম্যাটসুসিটা প্রমুখ ব্যক্তি হলেন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পোদ্যোক্তা। বাংলাদেশের সফল শিল্পোদ্যোক্তা হলেন জহুরুল ইসলাম, রণদা প্রসাদ সাহা, জুনাব আলী, স্যামসন এইচ চৌধুরী, ড . হোসনে আরা বেগম প্রমুখ।

জে. বি. সে এর মতে,
উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যের ভূমি, অন্যের শ্রম, এমনকি অন্যের মূলধন সমন্বয়ের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করেন।

উপরোক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞাগুলোর আলোকে আমরা উদ্যোক্তা সম্পর্কে বলতে পারি যে:
 
১. উদ্যোক্তা একজন সৃজনশীল, সাহসী ও কর্মঠ ব্যক্তি।
২. উদ্যোক্তা উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ করে সঠিকভাবে কাজে লাগান।
৩. তিনি যাবতীয় ঝুঁকি নেন।
৪. তিনি নতুন নতুন পণ্য, সেবা বা ধারণা উদ্ভাবন করেন।৫. তিনি পণ্যের নতুন বাজার খুঁজে বের করেন।
৬. তিনি পণ্য উৎপাদনের নতুন কৌশল প্রবর্তন করেন।
৭. উদ্যোক্তা একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়-দায়িত্ব নেন।

অতএব, ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের উপকরণসমূহকে একত্র করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা বলে।

ব্যবসায় উদ্যোগের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Entrepreneurship


ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তা ব্যবসায় বা ব্যবসায়িক ধারা পরিবর্তনের রূপকার। তিনি ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে উৎপাদনের উপকরণগুলো একত্র করেন। এরপর নিজস্ব কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসায়কে সাফল্যের দিকে নিয়ে যান। মূলত উদ্যোক্তার এ কর্মপ্রচেষ্টাকেই ব্যবসায় উদ্যোগ বলা হয়। তাই ব্যবসায় উদ্যোগকে ভালোভাবে বুঝতে হলে এর বিভিন্ন দিক ও উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে ব্যবসায় উদ্যোগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

১. বৈধ অর্থনৈতিক কাজ (Legal economic work): ব্যবসায় উদ্যোগের কাজটি অবশ্যই অর্থনৈতিক হতে হবে। অর্থনৈতিক কাজ বলতে অর্থ উপার্জন বা আয় - রোজগারের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করাকে বোঝায়। তবে এ কাজটি অবশ্যই দেশের আইনে বৈধ হতে হবে। যেমন: কেউ কমলালেবুর রস দিয়ে মদের কারখানা চালু করলে আমরা কাজটিকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলব না। কারণ এ ধরনের কাজকে আমাদের দেশে বৈধতা দেওয়া হয়নি।

২. মুনাফা অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট (Related with earning profit): ব্যবসায় উদ্যোগকে অবশ্যই মুনাফার সাথে। সংশ্লিষ্ট হতে হবে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তার কর্মসংস্থানের সাথে সাথে মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা থাকে। উদ্যোক্তা তার কাজে সফল হলে অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

৩. ঝুঁকি নেওয়া (Taking risk): আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলে । ব্যবসায় উদ্যোগে সব সময় ঝুঁকি বিদ্যমান। কারণ উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মুনাফা হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, অর্থসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। কথায় আছে No risk, no gain; High risk, high gain. অর্থাৎ, ঝুঁকি নেই তো মুনাফাও নেই; আর ঝুঁকি বেশি তো মুনাফাও বেশি। তবে এ ঝুঁকি তাকে মধ্যম মাত্রায় নিতে হয়।

৪. সৃজনশীল ও উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ড (Creative and innovative activity): নতুন কোনো ধারণা প্রবর্তন করাই সৃজনশীলতা। উদ্যোক্তা সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। সৃজনশীল মানসিকতার মাধ্যমে তিনি উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করেন। তিনি পুরনো পণ্য ও পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পণ্য ও উন্নত পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তিনি কাঁচামালের নতুন উৎস আবিষ্কার করেন ও পণ্যের নতুন বাজার তৈরি করেন। এই সৃজনশীলতা বা উদ্যোগ নেওয়া উদ্যোক্তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। তাই উদ্যোগ কোনো গতানুগতিক ব্যবসায় কর্মকাণ্ড নয়।

৫. উৎপাদনের উপকরণসমূহ সংগ্রহ (Collecting factors of production): ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণসমূহ তথা ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠনকে একত্র করতে হয়। নতুন ব্যবসায় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য স্থান, শ্রমিক ও অর্থের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন বিভাগের সাথে এসব উপাদানের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠিত করতে হয়। এরপর তা সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করতে হয়।

৬. কর্মসংস্থান সৃষ্টি (Creating employment): ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে উদ্যোক্তার নিজের ও অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ব্যবসায় উদ্যোগের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পণ্য বিপণনে অনেক লোকের দরকার হয়। তাই ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

৭. নতুন সম্পদ সৃষ্টি (Creation of new wealth): ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বিরাজমান বস্তুগত সম্পদ সংগ্রহ করা হয়। অতঃপর তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উযোগী করা হয়। যেমন: উদ্যোক্তা কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি করেন। এতে সম্পদের মূল্যমান বাড়ে।

৮. পণ্য বা সেবা (Product or service): ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফলাফল হলো পণ্য বা সেবা। এই পণ্য বা সেবার আর্থিক মূল্য থাকতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার ধারণা থেকেই ব্যবসায় উদ্যোগ সৃষ্টি হয়।

৯. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development): ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে অবশ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে বেকার সমস্যা কমে। এতে দেশের জাতীয় আয় বাড়ে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।

১০. সামাজিক দায়বদ্ধতা (Social responsibility): ব্যবসায় উদ্যোগে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। সমাজকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ে উদ্যোগের কাজ পরিচালিত হয়। এজন্য ব্যবসায় উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজের মঙ্গলময় ও কল্যাণকর কাজ করতে হবে।

সুতরাং বলা যায়, ব্যবসায় উদ্যোগ হলো কোনো দেশের অর্থনীতির জীবনীশক্তি। উদ্যোগের বিস্তারের সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি জড়িত। এটি বিশেষ ধরনের কাজ, যা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।

ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলি | Functions of Entrepreneurship


যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবসায় উদ্যোগের ভূমিকাই মুখ্য। উদ্যোক্তা কোন পর্যায়ের কাজ করতে পারবেন তা নির্ভর করে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। উন্নত দেশে যেসব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান, উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে তা নেই। তাই এক্ষেত্রে ব্যবসায় উদ্যোগ কার্যাবলির প্রকৃতি ভিন্ন হয়। নিচে ব্যবসায় উদ্যোগের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন (Development of entrepreneurial thinking): একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে সর্বপ্রথম উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন করতে হয়। উদ্যোক্তা নিজম্ব যোগ্যতা ও উপকরণের সহজলভ্যতা অনুধাবন করে বাজারের সুযোগ বা শূন্যতা খুঁজে বের করেন। এরপর সে অনুযায়ী তার নিজস্ব উদ্যোগ চিন্তার উন্নয়ন ঘটান।

২. উদ্ভাবন (Innovation): উপযুক্ত পণ্য , ধারণা বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন, নির্বাচন ও ব্যবহারের ওপর শিল্প প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। মূলত উন্নত বিশ্বেই অধিকাংশ উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার ও ব্যবহার হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বের কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে তা নিজ দেশ ও প্রতিষ্ঠানের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিল রেখে উপযুক্ত করে নিতে হয়। অন্যথায় দেশের উপযোগী কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হয়।

৩. সংগঠিতকরণ ও নেতৃত্ব দান (Organizing and leading): উদ্যোক্তার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নেতৃত্ব দান ও সাংগঠনিক কাজ সম্পাদন। সুনির্দিষ্ট কাজের ধারণা নিয়ে উপকরণ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্যোক্তার উদ্যোগ কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানের ধরন নির্বাচন, প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও স্থাপন, আনুষ্ঠানিকতা পালন প্রভৃতি প্রাথমিক কাজগুলোই উদ্যোগের সাংগঠনিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।

৪. ঝুঁকি নেওয়া (Taking risk): উদ্যোক্তাকে সব সময় ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে সিন্ধান্ত নিতে হয়। উদ্যোক্তারা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের সব দায় - দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হয়। উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সফলতা আসে না।

৫. সিদ্ধান্ত নেওয়া (Decision making): যেকোনো ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, সংগৃহীত সম্পদের পরিমাণ, মূলধন কাঠামো, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করতে হয়। উদ্যোক্তা যেকোনো প্রকল্পের সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন এবং তা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

৬. সামাজিক দায়িত্ব পালন (Performing social responsibilities): শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজের প্রতি উদ্যোক্তার দায়িত্ব আছে। উদ্যোক্তা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে সমাজের বেকার সমস্যা কমাতে পারেন। এছাড়া উদ্যোক্তাগণ নতুন নতুন ধারণা তৈরির ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। আবার রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল নির্মাণ, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো প্রভৃতির মতো সমাজকল্যাণমূলক কাজও করতে পারেন।

৭. দক্ষ ব্যবস্থাপনা (Efficient management): ব্যবস্থাপনা এমন একটি বিষয় যার সুষ্ঠু প্রয়োগ ছাড়া সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়। উদ্যোত্তাগণ উদ্যোগ নেওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থাপনার কাজও করেন। এজন্য তাদের দক্ষ ব্যবস্থাপকও হতে হয়। তাই বলা হয়, সব উদ্যোক্তাই ব্যবস্থাপক, তবে সব ব্যবস্থাপকই উদ্যোক্তা নন।

৮. নতুনত্ব সৃষ্টি (Creating novelties): বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের রুচি ও ভোগের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। এ পরিবর্তনশীলতার সাথে খাপ খাইয়ে চলার জন্য প্রতিনিয়তই ব্যবসায়ের ধরন ও শিল্পের উৎপাদনে পরিবর্তন আনতে হয়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাগণ পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে সর্বদাই নতুনত্ব আনেন। এভাবে উদ্যোক্তা বিশ্ববাজারে ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করেন।

৯. উপযুক্ত প্রযুক্তি নির্ধারণ (Selecting proper technology): উদ্যোক্তাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিজ দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিল রেখে ব্যবহার করতে হয়। এ কাজটি উদ্যোক্তাগণ তাদের উদ্ভাবনী শক্তি ও দক্ষতা দিয়ে করে থাকেন।

১০. অর্থসংস্থান (Financing): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ ও এর সঠিক ব্যবহার সংক্রান্ত কাজকে অর্থসংস্থান বলে। অর্থকে ব্যবসায়ের জীবনীশক্তি বলা হয়। নতুন ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থসংস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে সংগ্রহ করা যাবে, তা নির্ধারণ করতে হয়। এর পাশাপাশি তাকে উক্ত অর্থের সঠিক ব্যবহারেও দক্ষ হতে হয়।

১১. বাজার সৃষ্টি (Creating market): পণ্য বা সেবার বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতার সমষ্টিকে বাজার বলা হয়। উদ্যোক্তার উদ্ভাবিত পণ্য ও সেবার জন্য নতুন বাজারের সন্ধান করতে হয়। এজন্য বিভিন্ন কৌশলে সম্ভাব্য ক্রেতা ও ভোক্তাদের চাহিদা বাড়াতে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। অন্যথায়, তার আবিষ্কার ও উদ্ভাবন অনর্থক হয়ে পড়ে।

১২. গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and development): উদ্যোক্তার নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উৎপাদন, উৎপাদনের নতুন উপায় উদ্ভাবন করেন। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বেশি লাভ করতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হয় এবং দ্রব্যের গুণ বাড়াতে হয়। এজন্য প্রয়োজন গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুনত্ব প্রবর্তন করা।

তাই বলা যায়, শিল্প বা বাণিজ্যের অগ্রগতি না হলে সভ্যতা এত দূর অগ্রসর হতো না। কোনো দেশের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিল্প ও বাণিজ্য। আর শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নয়নে উদ্যোক্তাই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে বর্তমানে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে উদ্যোক্তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এজন্য উদ্যোক্তাকে উপরিউক্ত কাজ সম্পাদনে সচেষ্ট থাকতে হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url